কক্সবাংলা ডটকম(১৭ জুন) :: রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে সচিব পদমর্যাদায় কাজ করছেন মোট ৮৫ কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে নারী ১০ জন। অর্থনীতিসহ রাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণী জায়গাগুলোয় দাপটে বিচরণ তাদের। নিজ নিজ দক্ষতা ও যোগ্যতা দিয়ে এ অবস্থানে উঠে এসেছেন তারা।
গতকালই অর্থ মন্ত্রণালয়ের দুই গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে সচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে দুই নারীকে। এর মধ্যে একজন হচ্ছেন ফাতিমা ইয়াসমিন। তিনি আগামী ১১ জুলাই থেকে সিনিয়র সচিব হিসেবে অর্থ বিভাগের দায়িত্ব সামলাবেন। এছাড়া অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শরিফা খানকে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নারীর অংশগ্রহণ প্রশাসনকে গতিশীল করেছে। মেধা ও দক্ষতা দিয়ে প্রশাসনের নারী কর্মকর্তারা তাদের যোগ্যতা প্রমাণ করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত প্রশাসনের প্রতিটি স্তরেই নারীর উপস্থিতি এখন বেশ সরব। এ ধারা অব্যাহত থাকলে অচিরেই প্রশাসনে নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে সমতা আসবে।
ফাতিমা ইয়াসমিন: গতকালই অর্থ সচিবের পদে নিয়োগ পেয়েছেন ফাতিমা ইয়াসমিন। এর আগ পর্যন্ত এতদিন তিনি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিবের দায়িত্ব সামলে আসছিলেন। ফাতিমা ইয়াসমিনকে সিনিয়র সচিব হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব হিসেবে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে গতকালই। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এ প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আগামী ১১ জুলাই থেকে ফাতিমা ইয়াসমিন অর্থ সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন।
অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পদে নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি চলে যাওয়ায় তার শূন্য পদে যোগ দিচ্ছেন ফাতিমা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে এমবিএ করা ফাতিমা ইয়াসমিন ১৯৯১ সালের বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তা। কর্মজীবনের বড় একটি সময় তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে ছিলেন। এছাড়া কৃষি মন্ত্রণালয়, নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়েও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
২০২০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রথম নারী সচিব হিসেবে যোগ দেন ফাতিমা। এ দায়িত্ব আসার আগে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান, ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফাইন্যান্সের মহাপরিচালক ছিলেন। এর আগে ইআরডিতে থাকা অবস্থায় বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘ, এডিবি ও আইডিবির সঙ্গে কাজ করেছেন ফাতিমা।
শরিফা খান: ফাতিমা ইয়াসমিন অর্থ সচিব হওয়ায় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) তার শূন্য পদে নিয়োগ পাচ্ছেন আরেক নারী। পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শরিফা খানকে ইআরডি সচিবের দায়িত্ব দিয়ে গতকালই আরেকটি প্রজ্ঞাপন হয়েছে।
ফাতিমা ইয়াসমিন অর্থ বিভাগের দায়িত্ব বুঝে নেয়ার দিনই তার স্থলাভিষিক্ত হবেন শরিফা খান। ইআরডির নতুন সচিব শরিফা খানও বিসিএসের ১৯৯১ ব্যাচের কর্মকর্তা। এখন পর্যন্ত কৃষি মন্ত্রণালয়, বিপিএটিসি, ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা সেল ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
শরিফা খান ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনে কাউন্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী সব কাজেই নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করছেন। পর্যায়ক্রমে এটা হচ্ছে। বাংলাদেশে আগে কোনোদিন নারী স্পিকার ছিলেন না, এখন আছে। আগে নারীরা দায়িত্ব পেতেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের। এখন মেইনস্ট্রিম মন্ত্রণালয়গুলোয় নারীরা দায়িত্ব পাচ্ছেন। অর্থাৎ আস্থার কারণে নারীদের এগিয়ে আনা হচ্ছে। আমরাও চেষ্টা করছি, মেইনস্ট্রিমে নারী হিসেবে নয়, বরং অফিসার হিসেবে যাতে সম্মানের সঙ্গে কাজ করে যেতে পারি। আগের তুলনায় সে মূল্যায়নটা আমরা এখন পাচ্ছি। আগে বিভেদ ছিল, এখন দেখা যাচ্ছে সব পর্যায়েই নারীরা এগিয়ে আছেন। নারীরা কাজের গুণগত মান ধরে রেখেই এগিয়ে যাচ্ছেন। মেইনস্ট্রিমের সচিবদের মধ্যে এখন পার্বত্য চট্টগ্রাম, ইআরডি সচিব, অর্থ সচিব, পরিবেশ, শিল্প—সব জায়গায়ই নারীরা দায়িত্বে রয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ প্রথম অর্থ সচিবের দায়িত্ব পেলেন একজন নারী। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ যে তিনি মেইনস্ট্রিমে কাজের সুযোগ করে দিচ্ছেন। কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করার পাশাপাশি যাতে সম্মানের সঙ্গে কাজ করে যেতে পারি, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।
জুয়েনা আজিজ: বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মকর্তা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জুয়েনা আজিজ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক (সিনিয়র সচিব পদমর্যাদা) হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন। ২০২০ সালের শুরু থেকে তিনি এ দায়িত্ব সামলে আসছেন।
নোয়াখালীতে জন্মগ্রহণকারী জুয়েনা আজিজ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক সেখানেই সম্পন্ন করেছিলেন। পরে উচ্চতর পড়াশোনার জন্য ঢাকায় আসেন তিনি। ইডেন মহিলা কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেন। পড়াশোনা চলাকালেই বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৮৬ সালে প্রশাসন ক্যাডারের চাকরিতে যোগ দেন তিনি। প্রথমে নারায়ণগঞ্জে সহকারী কমিশনার হিসেবে কাজ শুরু করেন। এর সঙ্গে সঙ্গে পড়াশোনাও চালিয়ে গিয়েছেন। চাকরিতে থেকেই স্নাতকোত্তর পাস করেন। পরে বিদেশেও উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন।
গাজীপুরের শ্রীপুর থানা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন পদে চাকরি করেছেন জুয়েনা আজিজ। পরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, জনপ্রশাসন, ইআরডি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন। এভাবে উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব হয়ে ২০১৬ সালে পদোন্নতি পেয়ে সরকারের সচিব হন। প্রথমে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব পদমর্যাদা) হন। এরপর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগে সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। তারপর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব হন। সর্বশেষ ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
জাকিয়া সুলতানা: ২০২১ সালের ১৬ মে থেকে জাকিয়া সুলতানা শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এর আগে একই বছরের ১০ জানুয়ারি থেকে ১৫ মে পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের (সচিব) দায়িত্ব পালন করেন। জাকিয়া সুলতানা বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। তিনি কেন্দ্রীয় ও মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি ব্যাংকগুলো ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি মাঠ প্রশাসনে মুন্সীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে দায়িত্ব পালন করেছেন। দাপ্তরিক প্রয়োজনে ইউএসএ, ইউকে, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড, চীন, জাপান, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালি সফর করেছেন জাকিয়া সুলতানা।
১৯৬৮ সালে নাটোর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন জাকিয়া সুলতানা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৯ সালে বিএসসি (অ্যানাটমি) ও ১৯৯১ সালে এমএসসি (অ্যানাটমি) ডিগ্রি ও পরবর্তীকালে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিবেশবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন।
জাকিয়া সুলতানা বলেন, গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীদের নিয়োগ দেয়া শতভাগ ইতিবাচক দিক। নারীদের উন্নয়নের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী অনুভব করেছেন বলেই তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে আমরা খুবই আনন্দিত। প্রশাসনিক দিক থেকে কাজ করার জন্য যে ধরনের সহযোগিতা দরকার তা আমরা পাচ্ছি। আশা করি আমরা আগামীতে আরো ভালো করব।
মাহফুজা আখতার: প্রেষণে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যানের (সচিব) দায়িত্ব পালন করছেন মাহফুজা আখতার। তিনি বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের দশম ব্যাচের কর্মকর্তা। বর্তমান পদে যোগদানের আগে তিনি ১৭ জানুয়ারি ২০২১ থেকে ১৯ মে ২০২২ পর্যন্ত প্রায় দেড় বছর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে যোগদানের আগে তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
মাহফুজা আখতার ১৯৬৪ সালে চট্টগ্রাম জেলা সদরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৯ সালে রেলওয়ে এমপ্লয়িজ গার্লস হাইস্কুল থেকে প্রথম শ্রেণীতে এসএসসি এবং চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে ১৯৮১ সালে এইচএসসি পাস করেন। প্রাণিবিদ্যা (অনার্স) বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তিনি প্রথম স্থান অর্জন করেন। স্নাতকোত্তরে কীটতত্ত্ব বিষয়ে তিনি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শেষে তিনি কিছুদিন চট্টগ্রামের কুণ্ডেশ্বরী বালিকা মহাবিদ্যালয়ে জীববিদ্যার প্রভাষক পদে কর্মরত ছিলেন। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত মাধ্যমিক বিজ্ঞানশিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পে চট্টগ্রাম জোনের ‘জোনাল প্রজেক্ট অফিসার’ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি ১৯৯১ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে সহকারী সচিব হিসেবে যোগদান করেন এবং পরবর্তী সময়ে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত ছিলেন। এছাড়া কর্মজীবনের বিভিন্ন সময়ে তিনি কৃষি, খাদ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত থেকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
মোসাম্মৎ হামিদা বেগম: ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে মোসাম্মৎ হামিদা বেগম পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোকপ্রশাসন বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৮৮-৮৯ বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রশাসন ক্যাডারে ১৯৯১ সালের ২৬ জানুয়ারি যোগদান করেন। ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে সহকারী সচিব হিসেবে এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমিতে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এরপর ২০১৫ সালে তিনি যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পান। তিনি ২০১৬ সালে যুগ্ম সচিব হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেন এবং ২০১৮ সালে তিনি অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সচিব পদে পদোন্নতি লাভের আগ পর্যন্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোসাম্মৎ হামিদা বেগম বলেন, প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে, বিষয়টি অবশ্যই ইতিবাচক। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের যেকোনো দেশের জন্য এটা ভালো খবর। সরকার যখন সচিব হিসেবে একজনকে দায়িত্ব দেয় তখন তা নারী হিসেবে নয়, বরং সচিব হিসেবে যোগ্যতা ও দক্ষতা মূল্যায়ন করেই দায়িত্ব দেয়। কর্মক্ষেত্রে আমার অভিজ্ঞতাও খুবই ভালো। আমার সৌভাগ্য যে আমি যত জায়গায় কাজ করেছি, খুব ভালো সহকর্মী এবং তাদের সব ধরনের সহযোগিতা আমি পেয়েছি। আমি নিজেও সবাইকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। দেশের সার্বিক উন্নয়নে সম্মিলিতভাবে কাজ করায় আমি বিশ্বাস করি। নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থ বিভাগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিবদ্বয় বরাবরের মতো এখানেও সফলতার স্বাক্ষর রাখবেন—এ কামনা করি।
ড. শাহনাজ আরেফিন, এনডিসি: ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর সচিব হিসেবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে যোগদান করেন ড. শাহনাজ আরেফিন, এনডিসি। এর আগে তিনি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অতিরিক্ত সচিব পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের প্রশাসন ক্যাডারের দশম ব্যাচের একজন কর্মকর্তা হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি মাঠ প্রশাসনসহ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরো, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, জাতীয় সংসদ সচিবালয় এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের বিভিন্ন পরিসরে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া সরকারের বাইরেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় তার কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
তিনি শিক্ষাজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও এমফিল ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া তিনি ২০০০ সালে অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমপিএ ও ২০১৩ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালে তিনি ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ থেকে এনডিসি ডিগ্রি অর্জন করেন।
ড. শাহনাজ আরেফিন, এনডিসি বলেন, নারীদের এগিয়ে যাওয়ায় আমাদের সবারই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। তিনিই আমাদের সংবিধানে সমঅধিকারের প্রভিশন রেখেছেন। সেই সাংবিধানিক প্রবিধানের ওপর ভিত্তি করে প্রণীত আইন ও নীতি নারীর অগ্রযাত্রায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে, যার প্রতিফলন হিসেবেই এখন সব ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। ৫০ বছর ধরেই এ চর্চা হয়েছে, যা সরকারি-বেসরকারি সব খাতেই ছিল। ৫০ বছরের চর্চার ফলে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়নের বিষয়টি আজ অনেকটাই দৃশ্যমান।
ড. নাহিদ রশীদ: ২০২১ সালের ১৮ আগস্ট বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক (সচিব পদমর্যাদা) পদে ড. নাহিদ রশীদ যোগদান করেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের একজন সচিব এবং বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের ১৭তম মহাপরিচালক। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের প্রশাসন ক্যাডারের দশম ব্যাচের একজন কর্মকর্তা হিসেবে তিনি তার কর্মজীবন শুরু করেন। বোর্ডের মহাপরিচালক হওয়ার আগে তিনি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে অতিরিক্ত সচিবের দায়িত্ব ছিলেন। পাশাপাশি তিনি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়া গত ১৮ মে ড. ফারহিনা আহমেদকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। এর আগে তিনি অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। এদিকে বর্তমানে সচিব পদমর্যাদায় পরিকল্পনা কমিশনে সদস্য হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছেন মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম। এর আগে তিনি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অতিরিক্ত সচিবসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
Posted ১২:৩৭ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১৭ জুন ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta